|
তিন এএসআই মুসরাফিকুর, মামুন এবং সোহেল কুদ্দুছ। ছবিঃ ইত্তেফাক। |
তিন যুবককে অপহরণ ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণের অভিযোগে দুই এএসআইকে গ্রেফতার এবং প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগে এক এসআইকে প্রত্যাহারের পর মির্জাপুরে পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
আইনের রক্ষকই যখন নিজের হাতে অপরাধ তুলে নেয় তখন সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা কোথায় এ নিয়ে জনমনে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা তিন যুবককে অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রথমে তাদের প্রত্যাহার ও পরে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মির্জাপুর থানার এসআইকে মো. সোহেল কুদ্দুছ বহুরিয়া এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং তার চার সহযোগী গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। আজ রবিবার মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর থানায় খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
পুলিশের হাতে অপহরণের শিকার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ি এলাকার হান্নান সরকারের ছেলে রায়হান সরকার (২২), একই এলাকার লতিফ সরকারের ছেলে লাবিব হোসেন (২১) ও শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে নওশাদ ইসলাম ওরফে মাহফিন (২৪)। গত বুধবার তাদের অপহরণ করা হয়েছিল।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে রায়হান সরকার, লাবিব উদ্দিন, নওশাদ ইসলাম, তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং স্টেশনে যান। গ্যাস নেওয়ার সময় তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান গাড়ি থেকে নেমে পাশের দোকানে চা খেতে যান।
গ্যাস নিয়ে তাদের গাড়িটি ফিলিং স্টেশন থেকে একটু এগিয়ে যাওয়ার সময় সাদা পোশাকে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানসহ তাদের লোকজন একটি হাইয়েস মডেলের মাইক্রো নিয়ে ওই যুবকদের গাড়ি গতিরোধ করে। পরে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে রায়হান মিয়া, লাবিব উদ্দিন ও নওশাদ ইসলামকে নিয়ে যায়। এ সময়ে চা খেতে যাওয়া বাকি দুই বন্ধু কোন রকমে রক্ষা পায়।
পরে ওই তিন বন্ধুকে নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার ধেরুয়া এলাকায় নির্মানাধীন রেলওয়ে উড়াল সেতুর নিচে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিন বন্ধুকে মারপিট ও মুক্তি দেওয়ার শর্তে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলে তারা অভিযোগ করে। পরে বেশ কিছু সময় তাদের সঙ্গে টাকা নিয়ে দেন-দরবার হয়। এক পর্যায়ে ওই দুই এএসআই তাদের জানায় ১০ লাখ টাকা দিলেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।
এদিকে তাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান মুঠোফোনে তাদের পরিবার এবং মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর থানার ওসি তাদের উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালান। দুই থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাদের ওই দিন রাত ৮ টার দিকে উদ্ধার করে প্রথমে মির্জাপুর থানায় এবং পরে রাত ১২ টার দিকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে আসা হয়।
ঘটনাটি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে জানাজানি হলে গত বৃহস্পতিবার কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানকে প্রত্যাহার করে গাজীপুর ও টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। কালিয়াকৈর থানায় মামলার পর শুক্রবার পুলিশ লাইন থেকে দুই এএসআইকে গ্রেফতার করে গাজীপুরে নেওয়া হয়েছে বলে রবিবার কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ সিদ্ধিরগঞ্জে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর থানার এএসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমান গাজীপুর জেলায় গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবিতে) এক সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিবিতে দায়িত্ব পালনের সময় তারা এলাকার বহু নিরীহ লোকজনকে ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ